বরগুনায় ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যু, সক্ষমতার বাইরে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা

সারাদেশ প্রতিনিধি। বিনা
বরগুনায় মহামারী আকার ধারণ করতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশই বরগুনায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এ জেলায়। এ অবস্থায় ভর্তি হওয়া আক্রান্ত রোগীদের বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলাম।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৭ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ১৯৩ জন। এবছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৩১ জন আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত ৫ জনের।
বর্তমানে চিকিৎসা সেবা হাসপাতালের সক্ষমতার বাইরে
গতবছর জেলায় মোট ২ হাজার ৪৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ওই বছর বারগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪ জন। তবে এ বছর মাঝামাঝি সময়েই ব্যাপক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। যা সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর শতকরা হিসেবে ২৬ দশমিক ৫১ ভাগই বরগুনায়। অপরদিকে একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৫ জন। সে হিসেবে শুধু বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ।
জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ বছর ধরেই রয়েছে চিকিৎসক সঙ্কট। এছাড়া নার্স, বিভিন্ন জনবলসহ রয়েছে শয্যা সঙ্কটও। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৯ জন চিকিৎসক। অপরদিকে দেড় শতাধিক নার্স থাকার কথা থাকলেও কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৬৬ জন। ফলে হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫৫টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। এছাড়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। এরপর আউটডোরেও প্রায় প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে হাসপাতালে আসা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বর চিকিৎসক ও নার্সদের।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমানে আমাদের জনবল অনেক কম। প্রতিদিন যে হারে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে তা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা এবার কোরবানির ঈদেও ছুটি পাইনি। পরিবার রেখে আমরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। একজন রোগীর কাছে গিয়ে আরেক জনের রোগীর কাছে যেতে দেরি হলে অনেক সময় শুনতে হয় নার্সদের ব্যবহার ভালো না। বরগুনায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও ১০০ শয্যার নার্স দিয়ে চলছে হাসপাতালে কার্যক্রম। এতে প্রায় প্রতিদিন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা
সরেজমিনে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রতিদিন দেখা মিলছে না চিকিৎসকের। এছাড়াও ভর্তি রোগী বেড়ে যাওয়ায় বেড সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে রোগীদের যায়গা হয়েছে হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোর এবং লিফটের দরজার সামনে। ভর্তি রোগীদের আরও অভিযোগ বাইরের ক্লিনিকে করতে হয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এমনকি ওষুধও কিনতে হয় বাইরে থেকে।